ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিতর্কিত ছাত্র নেতা উমর খালিদকে একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে বিজেপির ছাত্র শাখা এবিভিপি ও বামপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত চরমে পৌঁছেছে।
গত দুদিন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট ও প্রবল উত্তেজনার পর আজ কয়েকশ বামপন্থী ছাত্রছাত্রী দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
তাদের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের কর্মীরা এবিভিপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। অন্যদিকে এবিভিপি মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, উমর খালিদের মতো নেতাদের কিছুতেই ‘দেশদ্রোহী’ কাজকর্ম চালাতে দেওয়া হবে না।
এদিন সকাল থেকেই দিল্লির প্রাণকেন্দ্র আইটিও এলাকায় দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন আইসা’র কর্মী সমর্থকরা।
রাজধানীকে প্রায় অচল করে দেওয়া এই আন্দোলনে তাদের দাবি ছিল – এবিভিপি ও দিল্লি পুলিশের সমর্থকরা গত দুদিন ধরে তাদের যে ব্যাপক মারধর করেছে তাতে প্রতিটি অভিযোগের ভিত্তিতে আলাদা আলাদা মামলা রুজু করতে হবে।
এই ঘটনার সূত্রপাত আসলে মঙ্গলবার, যেদিন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামযশ কলেজ ‘কালচার অব প্রোটেস্ট’ বা প্রতিবাদের সংস্কৃতি নামে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিল।
তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জেএনইউ-র ছাত্রনেতা উমর খালিদকে, দেশ-বিরোধী শ্লোগান দেওয়ার অভিযোগে গত বছর যিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন।
কিন্তু ক্ষমতাসীন বিজেপি-র ছাত্র শাখা এবিভিপি জানিয়ে দেয়, উমর খালিদ বা শেলা রশিদের মতো ‘দেশ-বিরোধীদের’ তারা ক্যাম্পাসেই ঢুকতে দেবে না।
এবিভিপি-র মুখপাত্র সাকেত বহুগুণা বলছিলেন, “তাদের আমন্ত্রণ জানানোটাই আসলে খুব লজ্জাজনক – কিন্তু তারপরও আমরা গণতান্ত্রিক পথেই তার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম।”
“কিন্তু সেদিন বহিরাগত বহু কমিউনিস্ট আচমকা রামযশ কলেজে এসে দেশ-বিরোধী শ্লোগান দিতে শুরু করেন, মাওবাদী-অধ্যুষিত বস্তারের স্বাধীনতা দাবি করতে থাকেন। আর এটা পুরোটাই ছিল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে খারাপ করার চক্রান্ত!”
কিন্তু এটা শুধু অভিযোগেই থেমে থাকেনি, রামযশ কলেজকে ঘিরে গোটা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ক্যাম্পাস কার্যত গত দুদিন ধরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।
আইসা-র নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের মদত নিয়ে এবিভিপি-র গুণ্ডারা তাদের ইচ্ছেমতো মারধর করেছে, বড় বড় পাথর ছুঁড়েও মারা হয়েছে।
আইসা সমর্থক জেএনইউ শিক্ষক নন্দিতা নারায়ণ এদিন বলছিলেন, “নির্লজ্জের মতো দিল্লি পুলিশ সেদিন এবিভিপি-কে পেটাতে সাহায্য করেছে। আমার চোখের সামনে ছেলেমেয়েদের যেভাবে মার খেতে দেখেছি, ভয় পাচ্ছিলাম ওরা না মরেই যায়!”
“এবিভিপি-কে লেলিয়ে দিয়ে পুলিশ বসে শুধু মজা দেখেছিল। এটাকে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি ছাড়া আর কোনোভাবে বর্ণনা করা যায় না”, বলছিলেন অধ্যাপক নারায়ণ।
দিল্লি পুলিশ অবশ্য ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী আলাদা আলাদা এফআইআর রুজু করতে রাজি হয়নি। স্পেশাল কমিশনার এসবিকে সিং সদর দফতর থেকে বেরিয়ে এসে হ্যান্ড-মাইক নিয়ে তাদের জানান, টেকনিক্যাল কারণেই সেটা সম্ভব নয়।
তার বক্তব্য ছিল, “আমরা দুই ছাত্র-গোষ্ঠীর কাছ থেকেই অভিযোগ পেয়েছি। ফলে আমরা চাইব আপনারা তদন্তে সহযোগিতা করুন। একটা ঘটনায় আলাদা আলাদা এফআইআর করা যায় না, তবে আমরা প্রত্যেকের বক্তব্য শুনে ও জবানবন্দী রেকর্ড করে তার ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেব এই আশ্বাস দিচ্ছি।”
আর যাকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের সূত্রপাত, সেই উমর খালিদও এদিনের বিক্ষোভে এসে দাবি করেন – গুণ্ডামি করে বা ভয় দেখিয়ে তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করা যাবে না।
উমর বলছিলেন, “এবিভিপির মতো সংগঠনের একটাই উদ্দেশ্য – মারপিট করেই হোক বা ভিডিও জালিয়াতি করে যে কোনও চর্চা, আলোচনা ও বিতর্ক থামিয়ে দেওয়া। আর এই কাজে তারা সরকার, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও পুরো সমর্থন পাচ্ছে। কিন্তু সরকারও শুনে নিক, এভাবে ভয় পেয়ে আমরা কিছুতেই চুপ করব না।”
দেশদ্রোহিতা আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমা কোথায়, তা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির জেএনইউ থেকে শুরু হয়েছিল দেশব্যাপী তুমুল বিতর্ক।
ঠিক এক বছরের মাথায় উমর খালিদকে ঘিরে আবারও একই ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে – তবে ঘটনার পটভূমি এবারে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়!